কোরআন তিলাওয়াত, হিফজ ও তাজবিদের গুরুত্ব
📖 কোরআন তিলাওয়াত, হিফজ ও তাজবিদের গুরুত্ব
ভূমিকা
কোরআনুল কারীম আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে নাজিলকৃত সর্বশেষ ও চূড়ান্ত গ্রন্থ। এটি মানুষের জন্য হিদায়াত, নূর ও রহমতের উৎস। মুসলমানদের জীবনে কোরআনের স্থান এমন যে, এর শিক্ষা ও নির্দেশনা ছাড়া ইমান সম্পূর্ণ হয় না। তাই প্রতিটি মুসলিমের দায়িত্ব হলো কোরআন শিখা, পড়া, বুঝা, আমল করা এবং অন্যকে শেখানো।
তবে কোরআন পড়ার ক্ষেত্রেও বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে—সঠিকভাবে তিলাওয়াত করা, তা হিফজ (মুখস্থ) করা এবং তাজবিদ অনুযায়ী আদায় করা। এই তিনটি বিষয় শুধু ইসলামী জ্ঞানের মূলভিত্তিই নয়; বরং এটি এক মুসলিমের আখিরাতের মুক্তির উপকরণ।
১. কোরআন তিলাওয়াতের গুরুত্ব
📌 কোরআন পড়ার ফজিলত
-
আল্লাহ তাআলা বলেন:
“যারা কিতাব পাঠ করে, নামাজ কায়েম করে এবং আমি যে রিযিক দিয়েছি তা থেকে গোপনে ও প্রকাশ্যে ব্যয় করে, তারা কখনো ক্ষতিগ্রস্ত হবে না। তারা এমন এক ব্যবসার আশা করছে যা কখনো ধ্বংস হবে না।” (সূরা ফাতির: ২৯) -
রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন:
“তোমাদের মধ্যে সর্বোত্তম সেই ব্যক্তি, যে কোরআন শেখে এবং অন্যকে শেখায়।” (সহীহ বুখারি) -
আরেক হাদীসে আছে:
“যে ব্যক্তি কোরআনের একটি অক্ষর পাঠ করে, তার জন্য দশটি নেকি লেখা হয়।” (তিরমিজি)
📌 তিলাওয়াতের উপকারিতা
-
হৃদয়ে শান্তি ও প্রশান্তি আসে।
-
গুনাহ মাফ হয় এবং আল্লাহর কাছে মর্যাদা বাড়ে।
-
তিলাওয়াতকারী ফেরেশতাদের সান্নিধ্যে থাকে।
-
আখিরাতে সুপারিশ করার ক্ষমতা লাভ করে।
📌 কোরআন তিলাওয়াতের শিষ্টাচার
-
পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন অবস্থায় পড়া।
-
তিলাওয়াতের সময় খুশু-খুজু রাখা।
-
অর্থ নিয়ে চিন্তা করা।
-
নিয়মিত সময় বের করে পড়া।
২. কোরআন হিফজের গুরুত্ব
📌 হাফেজদের মর্যাদা
-
রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন:
“যে ব্যক্তি কোরআন তিলাওয়াত করে ও তা মুখস্থ রাখে, তাকে জান্নাতে এমন মর্যাদা দেওয়া হবে, যতো আয়াত সে মুখস্থ করেছে।” (তিরমিজি) -
আরেক হাদীসে আছে:
“হাফেজকে কিয়ামতের দিন বলা হবে—‘পড় এবং উঠতে থাকো।’ যতদূর আয়াত পড়বে, ততদূর তার মর্যাদা বাড়তে থাকবে।” (আবু দাউদ)
📌 হিফজের উপকারিতা
-
আল্লাহর বিশেষ অনুগ্রহ লাভ।
-
আখিরাতে সুপারিশ করার সুযোগ।
-
পারিবারিক মর্যাদা বৃদ্ধি।
-
আত্মবিশ্বাস ও স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি।
-
যেকোনো স্থানে নামাজে সহজে কোরআন পড়তে পারা।
📌 হিফজের জন্য করণীয়
-
নিয়মিত মুরাজাআ (পুনরাবৃত্তি)।
-
সময় নির্ধারণ করে অনুশীলন।
-
পবিত্র মনোভাব ও নিয়ত।
-
কোরআন ভালোবাসার মানসিকতা।
৩. তাজবিদের গুরুত্ব
📌 তাজবিদ মানে কী?
“তাজবিদ” অর্থ হলো—সঠিক উচ্চারণের মাধ্যমে কোরআনের প্রতিটি হরফ ও শব্দ পড়া। এর মাধ্যমে কোরআনের আসল সৌন্দর্য অক্ষুণ্ণ থাকে এবং ভুল থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।
📌 তাজবিদের প্রয়োজনীয়তা
-
আল্লাহ তাআলা বলেছেন:
“কোরআন তিলাওয়াত কর সুরেলা ও পরিপূর্ণভাবে।” (সূরা মুজ্জাম্মিল: ৪) -
নবী ﷺ এবং সাহাবায়ে কেরাম সবসময় কোরআন তাজবিদসহ পড়েছেন।
📌 তাজবিদ না মানার ক্ষতি
-
অর্থ পরিবর্তন হয়ে যেতে পারে।
-
কোরআনের প্রতি অসম্মান দেখানো হয়।
-
ফরজ হওয়া সঠিক তিলাওয়াতের হক আদায় হয় না।
📌 তাজবিদ শেখার উপকারিতা
-
কোরআন পড়া সহজ ও সুন্দর হয়।
-
আল্লাহর কাছে বেশি নেকি পাওয়া যায়।
-
কণ্ঠে সুরেলা ধ্বনি আসে।
-
অন্যকে শেখানোর ক্ষমতা অর্জিত হয়।
৪. কোরআন শিক্ষার সামগ্রিক উপকারিতা
-
আত্মিক প্রশান্তি – দুনিয়ার দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তি।
-
নৈতিক উন্নতি – মন্দ কাজ থেকে বিরত থাকা।
-
আল্লাহর সন্তুষ্টি – জান্নাতের নিশ্চয়তা লাভ।
-
সামাজিক প্রভাব – হাফেজ, ক্বারী ও আলেম সমাজে বিশেষ মর্যাদা পান।
-
দীর্ঘস্থায়ী সুফল – মৃত্যুর পরও সওয়াব চলমান থাকে (সাদকায়ে জারিয়া)।
৫. উপসংহার
কোরআন তিলাওয়াত, হিফজ ও তাজবিদ শুধুমাত্র একটি ধর্মীয় শিক্ষা নয়; বরং এটি এক মুসলিমের জীবনের আলো, পথপ্রদর্শক ও নাজাতের উপকরণ। একজন মুসলিম যদি নিয়মিত তিলাওয়াত করে, হিফজের চেষ্টা করে এবং তাজবিদসহ কোরআন পড়ে—তাহলে তার দুনিয়া-আখিরাত উভয়ই আলোকিত হবে।
মাদরাসাগুলো এ ক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা পালন করছে। তাই আমাদের সবার উচিত—নিজে কোরআন শেখা, সন্তানদের কোরআন শিক্ষা দেওয়া এবং সমাজে কোরআনের আলো ছড়িয়ে দেওয়া।

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url